সমবায়ের শাব্দিক অর্থ হলো সম্মিলিত উদ্যোগে বা প্রচেষ্টায় কাজ করা। সম্মিলিত প্রচেষ্টায় এগিয়ে যাওয়ার অনুপ্রেরণা ও চিন্তা থেকেই সমবায়ের উৎপত্তি। শিল্পবিপ্লব ও প্রযুক্তিনির্ভর বৃহদায়তন ব্যবসায় সংগঠনের বিকাশের ফলে পুঁজিবাদী সমাজ ব্যবস্থার ভিত যত মজবুত হতে থাকে, এর প্রভাবে সমাজের অর্থনৈতিক বৈষম্যও দেখা দিতে থাকে। স্বল্পবিত্ত ও মধ্যবিত্ত শ্রেণির পেশাজীবী ও ব্যবসায়ীরা আর্থিকভাবে দূরবস্থার সম্মুখীন হতে থাকে। পুঁজিবাদী সমাজের সৃষ্ট এ জাতীয় অর্থনৈতিক বৈষম্য ও দূরবস্থা থেকে মুক্তির প্রয়াসে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে সমবায় সংগঠন গড়ে উঠে। সর্বপ্রথম সমবায় আন্দোলনের সূচনা হয় পশ্চিম ইউরোপ, উত্তর আমেরিকা ও জাপানে। তবে সমবায় সমিতি প্রতিষ্ঠার পথে অগ্রপথিক সংগঠন হচ্ছে ১৮৪৪ সালে উত্তর ইংল্যান্ডের রচডেল নামক স্থানে প্রতিষ্ঠিত রচডেল সমবায় সমিতি (Rochdale Equitable Pioneers Society)। ২৮ জন তাঁত শ্রমিকের ২৮ স্টার্লিং পাউণ্ড পুঁজি নিয়ে প্রতিষ্ঠিত এ সমবায় সমিতিকে বিশ্বের সর্বপ্রথম সমবায় ব্যবসায় হিসেবে গণ্য করা হয়। এ সমিতির সদস্যদের আর্থিক অবস্থা ভালো ছিল না। তারা তাদের স্বল্প বেতন দিয়ে উচ্চমূল্যের খাদ্যসামগ্রী ও নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি ক্রয় করতে সক্ষম ছিল না। সমবায় সমিতির মাধ্যমে তারা তাদের নিত্যপ্রয়োজনীয় ময়দা, , চিনি জাতীয় খাদ্য-সামগ্রী সংগ্ৰহ করে কম দামে নিজেদের মধ্যে ক্রয়-বিক্রয়ের ব্যবস্থা করেন।
নিজেদের মধ্যে গণতান্ত্রিক মানসিকতা, পারস্পরিক আস্থা ও শ্রদ্ধাবোধ এবং সততাকে তারা এ ব্যবসায় পরিচালনার নীতি হিসেবে গ্রহণ করেন। এভাবেই সমবায় সমিতির যাত্রা শুরু হয়।
আমাদের এ উপমহাদেশে সর্বপ্রথম ১৯০৪ সালে সরকারিভাবে সমবায়ের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়। ১৯১৮ সালে কলকাতায় বেঙ্গল কো-অপারেটিভ ফেডারেশন প্রতিষ্ঠা হয়। ১৯৫৯ সালে প্রখ্যাত সিভিল সার্ভিস কর্মকর্তা ড. আক্তার হামিদ খানের নেতৃত্বে কুমিল্লায় পল্লী উন্নয়ন একাডেমি (BARD) প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে সমবায় সমিতি আন্দোলন ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করে। স্বাধীন বাংলাদেশে ১৯৭২ সালে জাতীয় সমবায় ব্যাংক লিমিটেড কার্যক্রম শুরু করে। পরবর্তীকালে বাংলাদেশে বিভিন্ন প্রকার সমবায় সমিতি গড়ে উঠেছে। বাংলাদেশের একটি উল্লেখযোগ্য সমবায় সমিতি হচ্ছে দুগ্ধ উৎপাদনকারীদের সমবায় সংগঠন 'বাংলাদেশ দুগ্ধ উৎপাদনকারী সমবায় ইউনিয়ন লিঃ' যা ‘মিল্ক ভিটা' নামে পরিচিত। এছাড়া জাতীয় পর্যায়ে বাংলাদেশ মৎস্যজীবী সমবায় সমিতি লিঃ, বাংলাদেশ অটোরিক্সাচালক সমবায় ফেডারেশন লিঃ, কুমিল্লা শিল্প সমবায় সমিতি লিঃ, বাংলাদেশ জাতীয় মহিলা সমবায় সমিতি লিমিটেডসহ অনেক সমবায় সমিতি কাজ করছে। ২০০৯ সালের হিসাব মতে, বাংলাদেশে ১,৬৩,৪০৮টি প্রাথমিক সমবায় সমিতি রয়েছে যার মোট সদস্য সংখ্যা হচ্ছে ৮৫,০৫,০৩৮ জন। বর্তমানে বাংলাদেশের সকল সমবায় সমিতি ২০০১ সালের সমবায় আইন এবং ২০০৪ সালের সমবায় বিধিমালা অনুযায়ী পরিচালিত হচ্ছে। বাংলাদেশসহ উন্নয়নশীল ও উন্নত বিভিন্ন দেশে সমবায় একটি জনপ্রিয় ব্যবসায় সংগঠন হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করেছে।
আরও দেখুন...